সেবার বিররণঃ
সুন্দরবনের রহস্যময় অরণ্যের গভীরে, হিরণ পয়েন্ট ও কালাবগি ফরেষ্ট অফিসের মাঝামাঝি অঞ্চলে অবস্থিত এক নিস্তব্ধ স্থান—শেখেরটেক মন্দির। নদী, খাল আর ম্যানগ্রোভ গাছে ঘেরা এই স্থানটি শুধু একটি দর্শনীয় স্পট নয়, এটি সুন্দরবনের মানুষের শত বছরের বিশ্বাস ও বেঁচে থাকার ইতিহাসের নীরব সাক্ষী।
শেখেরটেক মূলত হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের একটি ছোট শিপ মন্দির হিসাবে পরিচিত এবং বছরে একবার অনেক হিন্দু পূর্নার্থী/তীর্থযাত্রী এখানে আসে পূর্ন অর্জনের জন্য এবং শ্রদ্ধাঞ্জলী দেয়। যেখানে হিন্দু-মুসলিম নির্বিশেষে মানুষ শ্রদ্ধা জানায়। লোক কথা অনুযায়ী, বহু বছর আগে এই অঞ্চলে বসবাস করতেন এক ধর্মপ্রাণ সাধক—যাকে সবাই “শেখ” নামে চিনত। তিনি বনজীবীদের রক্ষা, বিপদ থেকে মুক্তি এবং প্রকৃতির সাথে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের জন্য প্রার্থনা করতেন। তাঁর স্মৃতিতেই গড়ে ওঠে শেখেরটেক, যা পরবর্তীতে বনবিবির কাহিনির সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে পড়ে।
সুন্দরবনে কাজ করতে আসা জেলে, মৌয়াল ও বাওয়ালিরা আজও বিশ্বাস করেন—
বনে প্রবেশের আগে শেখেরটেকে মাথা নত না করলে যাত্রা অসম্পূর্ণ থেকে যায়।
কারণ সুন্দরবন শুধু বন নয়—এটি রয়্যাল বেঙ্গল টাইগারের আবাস।
টাইগার এখানে শুধু একটি প্রাণী নয়, এটি ভয়, শ্রদ্ধা আর শক্তির প্রতীক।
বনের মানুষদের মুখে শোনা যায় বহু গল্প—
কখনো হঠাৎ ঝোপের আড়াল থেকে বাঘের নিঃশব্দ দৃষ্টি,
কখনো কুয়াশাভেজা ভোরে নদীর ধারে বাঘের পায়ের ছাপ।
এক বৃদ্ধ জেলে বলেন.....
“আমরা জানি বাঘ আমাদের শত্রু না।
বাঘ এই বনের পাহারাদার।
আমরা ভুল করলে সে আসে।”
এই বিশ্বাস থেকেই সুন্দরবনের মানুষ বাঘকে “দক্ষিণ রায়” বা বনবিবির সৈনিক বলে মনে করে। শেখেরটেকে এসে তারা প্রার্থনা করে—যাতে বনে কাজ করতে গিয়ে বাঘের সামনে পড়লেও জীবন রক্ষা পায়।
শেখেরটেকের সবচেয়ে বিস্ময়কর দিক হলো—
এখানে কোনো ধর্মীয় বিভেদ নেই।
একই জায়গায় জ্বলে ধূপ, দেওয়া হয় মানত, বলা হয় দোয়া।
কারণ বনের ভেতর মানুষের পরিচয় একটাই—বেঁচে থাকা।
আজ যখন পর্যটকরা নৌপথে শেখেরটেকে পৌঁছান,
চারপাশের নিস্তব্ধতা, বাতাসে ভাসমান বিশ্বাস আর বনের গভীর সবুজ
মনে করিয়ে দেয়—
সুন্দরবন শুধু প্রকৃতির নয়, এটি গল্পে গড়া এক জীবন্ত ইতিহাস।
প্রকৃতিকে জয় করার নয়,
প্রকৃতির সাথে বিশ্বাস নিয়ে বেঁচে থাকার নামই সুন্দরবন। 
C.E.O,
Marian Sundarban Tour & Travel.
Contact: 01732124162
01568235127 (What's app)
@highlight